সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র:
ভিক্ষাবৃত্তি ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ অবস্থায় নিপতিত ব্যক্তিগণকে সরকারী তত্ত্বাবধানে রেখে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য উপায়ে সমাজে পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে ভবঘুরে আইন, ১৯৪৩ প্রবর্তন করা হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় রোটারিয়ালই, ডবিলউ অভিমত প্রকাশ করেন যে, ভবঘুরে/ভিক্ষুক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান ও কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা সরকারি উদ্যোগেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। মি:হল্যান্ডের চেষ্টাতেই ১৯৪২ সালে কলকাতায় স্থাপিত হয় ভবঘুরে নিবাস। ১৯৪৩ সালে তদানিন্তন অবিভক্ত বাংলাদেশে মহা দুর্ভিক্ষের পটভূমিকায় প্রণীত এই আইন কলকাতা মহানগরীতে প্রথম প্রয়োগ করা হয়। এই আইনের আওতায় এই কর্মসূচির অপর উদ্দেশ্য ছিল ভিক্ষাবৃত্তি নিরোধকল্পে ভবঘুরেদের নিয়ন্ত্রণ করা। পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কুমিল্লা জেলার চাঁদপুরে শিশু, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ভবঘুরে নিবাস স্থাপিত হয়। ১৯৬১ সালের এপ্রিল মাসে ময়মনসিংহ জেলার ধলা এবং তৎকালীন ঢাকা বর্তমান গাজীপুর জেলার পূবাইলে ভবঘুরে নিবাস পুনরায় স্থানান্তরিত হয়।
স্বাধীনতা লাভের পর যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরেদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় ১৯৭৭ সনে ঢাকার মিরপুর, মানিকগঞ্জের বেতিলা, নারায়নগঞ্জের গোদনাইল এবং গাজীপুর জেলার কাশিমপুরে নতুন চারটি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়। উল্লেখিত কেন্দ্রসমূহ এতদিন যাবৎ ভবঘুরে আইন, ১৯৪৩ এর আওতায় পরিচালিত হতো। কিন্তু যুগের চাহিদা মোতাবেক উক্ত আইন বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুগোপযোগী না হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার “ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১ প্রবর্তন করে এবং উক্ত আইনের আওতায় ২০১৫ সালে ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি(পুনর্বাসন) বিধিমালা ২০১৫” প্রণয়ন করা হয়। ভবঘুরে বা ভিক্ষাবৃত্তি সমস্যার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে চরম দারিদ্রতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গৃহ ও ভূমিহীনতা, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, মুদ্রাস্ফীতি, ধর্মীয় অনুশাসন ও মূল্যবোধের অবক্ষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন)আইন ২০১১ অনুসারে ভবঘুরে ব্যক্তির সংজ্ঞা হচ্ছে; “ভবঘুরে অর্থ এমন কোন ব্যক্তি যাহার বসবাসের বা রাত্রি যাপন করিবার মত সুনির্দিষ্ট কোন স্থান বা জায়গা নাই অথবা যিনি কোন উদ্দেশ্য ব্যতিত অযথা রাস্তায় ঘোরাফিরা করিয়া জনসাধারণকে বিরক্ত করেন অথবা যিনি নিজে বা কাহারো প্ররোচনায় ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত হন; তবে কোন ব্যক্তি দাতব্য, ধর্মীয় বা জনহিতকর, কোন কাজের উদ্দেশ্যে অর্থ, খাদ্য বা অন্য কোন প্রকার দান সংগ্রহ করিলে এবং উক্ত উদ্দেশ্যে বা কাজে তাহা ব্যবহার করিলে তিনি ইহার অন্তর্ভূক্ত হইবেন না” উক্ত আইনের আওতায় নিরাশ্রয় ব্যক্তির সংজ্ঞা হলো “নিরাশ্রয় ব্যক্তি অর্থ এমন কোন ব্যক্তি যাহার বসবাসের বা রাত্রি যাপন করিবার মত সুনির্দিষ্ট কোন স্থান বা জায়গা এবং ভরণ-পোষনের জন্য নিজস্ব কোন সংস্থান নাই এবং যিনি অসহায়ভাবে শহর বা গ্রামে ভাসমান অবস্থায় জীবন-যাপন করেন এবং সরকার কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত বিভিন্ন ভাতা, সাহায্য, ইত্যাদি লাভ করেন না;”
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
একটি জনবহুল ও উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশের সকল জনগোষ্ঠীর সুষম আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যতীত এ দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি আনয়ন করা সম্ভব নয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে দেশে ০৬টি সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করে আসছে। অসহায় ভবঘুরেদের ভরণপোষণ, রক্ষণাবেক্ষণ, সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে সমাজে কর্মক্ষম উৎপাদনশীল নাগরিক হিসাবে পুনর্বাসিত করাই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।
প্রদত্ত সেবাসমূহ:
কেন্দ্রের নিবাসীদের আশ্রয়, ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা, শরীর চর্চা, সাধারণ ব্যবহারিক ও নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ,সাংস্কৃতিক, চিত্ত বিনোদন, মানসিক উন্নয়ন ব্যক্তি কেন্দ্রিক সমাজকর্ম, উদবুদ্ধকরণ, পুনর্বাসন ও অনুসরণ ইত্যাদি কর্মসূচির আওতাভুক্ত রয়েছে।
প্রশিক্ষণ:
ইন্ডাষ্ট্রিয়াল গার্মেন্টস, দর্জি বিদ্যা,এমব্রয়ডারী, বাঁশ ও বেতের কাজ, চট ও পাটের কাজ, উলের কাজ, রান্না শিক্ষা, কার্পেন্টারী, চুলকাটা, কৃষি ও মৎস্য চাষসহ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে।
কার্যক্রম বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টগণ:
সমাজসেবা অধিদফতরের প্রতিষ্ঠান অধিশাখার অধীনে সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রসমূহ পরিচালনা করে। পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) এর নেতৃত্বে ০১ জন অতিরিক্ত পরিচালক (প্রতিষ্ঠান), ০১ জন উপপরিচালক (ভবঘুরে কার্যক্রম), ০১ জন প্রধান ব্যবস্থাপক (সহকারী পরিচালক) (ভবঘুরে কার্যক্রম) সদর দপ্তর পর্যায়ে এবং মাঠ পর্যায়ে সহকারী পরিচালক/ব্যবস্থাপকগণ সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট।
০৬টি আশ্রয় কেন্দ্রের তথ্য:
ক্রঃনং |
কেন্দ্রের নাম ও অবস্থান |
প্রতিষ্ঠাকাল |
জমির পরিমাণ |
অনুমোদিত আসন সংখ্যা |
বর্তমান নিবাসীর সংখ্যা (মে/২০২১) |
নিবাসীর ধরণ |
১। |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র, ধলা,ত্রিশাল,ময়মনসিংহ। |
১৯৬১ |
১৬.৬৭ একর |
৩০০ |
২৬৬ |
পুরুষ/বালক |
২। |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র,পুবাইল, গাজীপুর। |
১৯৬১ |
৭.০৩ একর |
৫০০ |
২২০ |
মহিলা |
৩। |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র,গোদনাইল, নারায়নগঞ্জ। |
১৯৭৭ |
২.৮৯ একর |
৪০০ |
১৯৯ |
বালক |
৪। |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র,কাশিমপুর, গাজীপুর। |
১৯৭৭ |
৫.৪৪৫ একর |
৩০০ |
১৮১ |
মহিলা/মা সহ শিশু |
৫। |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র, বেতিলা, মানিকগঞ্জ। |
১৯৭৭ |
৫.০৭ একর |
২০০ |
ভবন দুইটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় ২০১৭সাল হতে এর কার্যক্রম বন্ধ আছে। |
শিশু |
৬। |
সরকারী আশ্রয় (অভ্যর্থনা) কেন্দ্র, মিরপুর, ঢাকা। |
১৯৭৭ |
০.৫২ একর |
২০০ |
২৮ |
মহিলা/পুরুষ/বালক |
|
মোট |
১৯০০ |
৮৯৪ জন |
|
সেবা গ্রহীতা:
‘নিরাশ্রয় ব্যক্তি-অর্থ এমন কোন ব্যক্তি যার বসবাসের বা রাত্রিযাপন করার মত সুনির্দিষ্ট স্থান বা জায়গা এবং ভরণ-পোষণের জন্য কোন সংস্থান নাই এবং যিনি অসহায়ভাবে শহর বা গ্রামে ভাসমান অবস্থায় জীবন-যাপন করেন এবং সরকার কর্তৃক, সময় সময় প্রদত্ত বিভিন্ন ভাতা, সাহায্য ইত্যাদি লাভ করেন না।
‘ভবঘুরে-অর্থ এমন কোন ব্যক্তি যার বসবাসের বা রাত্রিযাপন করার মত সুনির্দিষ্ট কোন স্থান বা জায়গা নাই অথবা যিনি নিজে বা কারো প্রয়োচনায় ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত হন; তবে কোন দাতব্য, ধর্মীয় বা জনহিতকর কোন কাজের উদ্দেশ্যে অর্থ, খাদ্য বা অন্য কোন প্রকার দান গ্রহণ করলে এবং উক্ত উদ্দেশ্যে বা কাজে তা ব্যবহার করলে তিনি এর অন্তভুক্ত হবেন না।
সেবা প্রদান পদ্ধতি:
সেবা প্রদানের সময়সীমা:
ভবঘুরে হিসেবে মিরপুর অভ্যর্থনা কেন্দ্রে/ আশ্রয়কেন্দ্রে আনয়নের সময় থেকে
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণতঃ মুক্তি/পুর্নবাসন প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত।
পুনর্বাসনের তথ্য: (মে’২০২১ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত)
ক্রঃনং |
কেন্দ্রের নাম |
চাকুরী |
বিবাহ |
অভিভাবকের নিকট হস্তান্তর/বিচারক কর্তৃক মুক্তি |
ঋণ অনুদান ও অন্যান্য |
মোট পুনর্বাসন |
১। |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র, ধলা,ত্রিশাল,ময়মনসিংহ। |
২১৭১ |
০৫ |
৩৮৪৭ |
৪৩৭ |
৬৪৬০ |
২। |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র,পুবাইল, গাজীপুর। |
৪৩৭ |
৭৮ |
৭১৩১ |
৯১৬ |
৮৫৬২ |
৩। |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র,গোদনাইল, নারায়নগঞ্জ। |
৫৫২ |
৪৯ |
৩৮৬৬ |
২৯৬ |
৪৭৬৩ |
৪। |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র,কাশিমপুর, গাজীপুর। |
১৩৬২ |
১২৫ |
১৭২৭ |
১৫৫ |
৩৩৬৯ |
৫। |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র, বেতিলা, মানিকগঞ্জ। |
৪৫৩ |
০ |
৯০৫ |
১৪৫ |
১৫০৩ |
৬। |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র/ (অভ্যর্থনা কেন্দ্র), মিরপুর, ঢাকা। |
২১৮ |
১৫০ |
২৮২৭২ |
৭৫৬ |
২৯৩৯৬ |
|
|
৫১৯৩ |
৪০৭ |
৪৫৭৪৮ |
২৭০৫ |
৫৪০৫৩ |
সেবা গ্রহণের জন্য যোগাযোগ:
ক্রঃনং |
কেন্দ্রের নাম ও অবস্থান |
নিবাসীর ধরন |
কেন্দ্রের প্রধানের নাম |
টেলিফোন / মোবাইল নম্বর |
১ |
সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, ধলা, ত্রিশাল,ময়মনসিংহ |
পুরুষ/ বালক |
মোহাম্মদ রেদওয়ান হোসেন সহকারী পরিচালক |
০১৭২৬৪৫৩৯১৭ |
২ |
সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, পুবাইল, গাজীপুর |
মহিলা |
সাইফুল ইসলাম সহকারী পরিচালক |
০১৯১১৭০৮৬৯৪ |
৩ |
সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, গোদনাইল, নারায়ণগঞ্জ |
বালক |
কামরুন নাহার আরজু উপ-সহকারী পরিচালক |
০১৯২৮৭৭৪৯০৩
|
৪ |
সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, কাশিমপুর, গাজীপুর |
মহিলা |
মোঃ জাকির হোসেন, উপ-সহকারী পরিচালক |
০১৭২৯১৭১০০৭ |
৫ |
সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র / (অভ্যর্থনা কেন্দ্র) মিরপুর, ঢাকা। |
মহিলা/ পুরুষ/ বালক |
নাছরিন সহকারী ব্যবস্থাপক |
০২-৫৫০৭০৫০৫ মোবাঃ ০১৯৫৫৯৫৬৩৫৭ |
৬ |
সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, বেতিলা, মানিকগঞ্জ |
বালক |
লাভলী খানম ব্যবস্থাপক (অঃদাঃ) |
০১৮৮৬৩৫১১৩০ |
দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সরকার কর্তৃক পরিচালিত ০৬টি সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রের অনুমোদিত আসন সংখ্যা ১৯০০। কেবল রাজধানী ঢাকা শহরেই নয় অন্যান্য শহরগুলোতেও ছিন্নমূল ভাসমান অসহায় জনগোষ্ঠী অর্থাৎ ভবঘুরেদের বিচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সময়ের প্রয়োজনে চাহিদার নিরীক্ষে উক্ত কর্মসূচিকে আরো বেগবান ও সময়োপযোগী করে তুলতে প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আইন / বিধিমালা:
ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১
ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) বিধিমালা, ২০১৫